নাজমুস সাকিব রহমান »
২৪ জুলাই, ২০২০। বাংলাদেশে যারা লিরিক লিখে থাকেন—তাদের জন্য বিশেষ একটা দিন। ওই দিন ‘গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়। জানিয়ে রাখা ভাল, এর আগে অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু গীতিকবিরা এক লাইনে দাঁড়াইতে পারেন নাই। এই প্রথম ব্যাপারটা ঘটতে দেখা গেল। তবে এর মানে এই না যে দেশের সব গীতিকবি এই সংঘের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
যে কোনো উদ্যোগের ভবিষ্যৎ অজানা। তারপরেও আশা করছি— এই সংগঠনের মাধ্যমে গীতিকবিরা হারানো গৌরব ফিরে পাবেন। পাবেন অর্থনৈতিক মুক্তিও। কোনো এক কারণে অনেকে বিশ্বাস করে না, ডাবিং আর্টিস্টদের (গায়ক-গায়িকা) মত গীতিকবিদেরও ভালো থাকার অধিকার আছে। জানি না—এই সংঘ ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে কিনা!



মাত্রই যাত্রা শুরু করা একটা সংগঠন নিয়ে বেশি কিছু বলা উচিত না। তারপরেও বলে রাখছি—এই উদ্যোগ যেন বাংলা চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর মত না হয়। কারণ এখানেও ভোটের রাজনীতি হতে পারে। বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (বাম্বা) মত এক সভাপতি বছরের পর বছর থেকে যেতে পারে। হয়রানির ব্যাপার তো আছেই!
সাধারণত দেখা যায়, সৃষ্টিশীলতা কমে গেলে অনেকে সভা-সমিতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গীতিকবি সংঘও সেরকম কিছু কিনা তা বুঝতে সময় লাগবে।
ইতিমধ্যে গীতিকবি সংঘ সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। এজন্য তারা একটা শর্তও দিয়েছে। সদস্যপদ পেতে আগ্রহী গীতিকবির প্রকাশিত গানের সংখ্যা হতে হবে ২৫টি। আমি এই সংখ্যাটা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে বলবো। সাধারণত বেতার বা বিটিভির তালিকাভুক্ত গীতিকবি হতে গেলে অনেকগুলা গান জমা দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই নিয়ম (!) গীতিকবি সংঘের ভেতর কীভাবে ঢুকল কে জানে!
আমার এই কথায় কেউ যেন মনে না করেন আমি সংঘে নাম লেখাতে চাই। এটা বলার একটা কারণ আছে। কারণটা খুবই স্পষ্ট। গীতিকবি সংঘের বেশিরভাগ সদস্য ক্যাসেট-সিডির যুগ দেখেছেন। ওই সময় প্রতি অ্যালবামে দশ থেকে বারোটা গান থাকতো। বলা যায়—গীতিকবিরা অনেক লেখার সুযোগ পেতেন। কিন্তু ভার্চুয়াল লাইফ আসার পর সেই ছবিটা বদলে গেছে। এখন সিঙ্গেলসই বেশি রিলিজ হচ্ছে। একটা গান বানানো থেকে ভিডিও নির্মাণ—এর ভেতর বছর চলে যায়।
গত এক দশকে বাংলাদেশে গান প্রকাশের সংখ্যা কমে এসেছে। বলা যায়, একজন নতুন গীতিকবির ২৫টা গান প্রকাশিত হতে অনেক বছর লেগে যাবে। খোদা না করুক—কেউ কেউ সদস্য না হয়েই মরহুম হয়ে যেতে পারেন। তো, সংঘ-সংশ্লিষ্ট লোকজন ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে পারেন। তবে আমার ভাবনা পছন্দ না হলে আরেকটা আইডিয়া দিতে পারি। আপনারা ১০০ নম্বরের একটা ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেন। প্রথম প্রশ্নটা হবে …।
লেখক : গদ্যকার, গণমাধ্যমকর্মী।