রবিউল রবি »
আগামী ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানাতে এবং মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের বানান ভুল করেই ব্যানার টাঙিয়েছেন দুই যুবলীগ নেতা। শুধু শেখ হাসিনারই নয়, জাতির পিতার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’র বানানও বিকৃত করা হয়েছে তাদের ব্যনারে। এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছেন জিয়াউল হক এবং গোলাম শরীফ তুষার নামে দুই যুবলীগ নেতা।
সরেজমিনে বুধবার (৩০ নভেম্বর) নগরের দেওয়ানহাট -কদমতলী সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সমাবেশে যোগদানের প্রচারণার জন্য ওই দুই নেতা টাঙিয়েছেন বিশাল কয়েকটি ব্যানার। যে ব্যানারে স্পর্শকাতর শব্দগুলোতেই করা হয়েছে বানানের ভুল। এছাড়াও একই লেখা দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে দেওয়ানহাটের আশেপাশের এলাকার দেয়ালজুড়ে।
ওই দুই যুবলীগ নেতার ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তলাবিহীন ঝুড়ি এখন উন্নয়নের বিস্ময়’ লেখার কথা থাকলেও হাসিনার বানানের পরিবর্তে সেখানে লেখা হয়েছে ‘হাসিরার’। ঠিক তারই নিচে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দের বানানকে ‘বন্ধবন্ধু’ লেখা হয়েছে। একইলাইনে ‘জননেত্রী’র অংশে লেখা ছিল ‘সননেত্রী’।
স্পর্শকাতর শব্দের এমন সব ভুলে ইতোমধ্যে এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। নেতারা বলছেন, নিজেদের ‘শো অফ’ করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বানানগুলোর প্রতিই উদাসীন ছিলেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিয়াউল এবং তুষার নামে ওই দুই যুবনেতা নগরের ২৩ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ‘ভুল বানান’ সম্বলিত ব্যানারেও রয়েছে তার ছবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি করে উঠে আসা নেতারা সবসময় এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকে। জাতির পিতা এবং প্রধানমন্ত্রীর নামের বানানে ভুল তো মারাত্মক বিষয়। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এখন তারা দোষ প্রেসের (ছাপাখানা) ওপর চাপাবে স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু তাদের তো দায়িত্ব ছিল সবকিছু দেখে শুনে ব্যানার তোলার। আমার কাছে মনে হয় এদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশপাশি রাজনৈতিক অভাব রয়েছে।’
এদিকে, ব্যানারের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি ২৩ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাবেদের। তিনি বাংলাধারাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি। ছবিগুলো আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। আমি দেখছি।’
এরপর তার হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভুল বানান’ সম্বলিত ব্যানারের ছবি পাঠানোর পর তিনি প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, ‘এটা আমি মাত্র দেখলাম, মারাত্মক ভুল। আমার নিজের নামেও এমন কোন ব্যানার নেই। আমি একটা ব্যানার তুলেছি শুধু আমার ওয়ার্ড অফিসের সামনে। সেখানে আমার নিজের ছবিও আমি ব্যবহার করিনি। আর এখানে দেখলাম যে, একটা ছবিতে আমার সঙ্গে নওফেল ভাই, মহিউদ্দিন ভাই, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি-সেক্রেটারির ছবি দেয়া। আরেকটায় দেখলাম নাছির ভাই, মহিউদ্দিন ভাইসহ সবার ছবি দিছে আমার ছবির ওপর।’
ভুলের জন্য তাদের ‘বকাঝকা’ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে এতবড় ভুল বের করেছেন। আমি তাদের ফোন করে অনেক বকাঝকা করেছি। এরপর ৫ মিনিটের মধ্যে ব্যানার নামানোর নির্দেশ দিছি। আর তাদেরকে আমি বলিও নাই আমার ছবি দিয়ে ব্যানার করতে। তারপরও তারা করছে।’
জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা গোলাম শরীফ তুষার বলেন, ‘এটা আসলে ভাইয়া প্রেসের মধ্যে এখন ঝামেলা তো, ওখানে ভুল করে ফেলছে। এই ব্যানার আমরা পরিবর্তন করে ফেলতেছি।’
এত বড় ভুল কিভাবে আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেল?—এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যানারটা আসলে পোলাপাইনে গিয়ে নিয়ে আসছে আবার ওরাই লাগাইছে। এখনই খুলে ফেলতেছে, নতুন ব্যানার দিবে। বিষয়টা আসলে অনেক জটিল। এটা আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটা লজ্জাজনক ব্যাপার। মাত্রই এটি সম্পর্কে আমি অবগত হইছি। এখনই খুলে ফেলা হচ্ছে সবগুলা।’
আরেক যুবনেতা জিয়াউল হকও এমন ভুলের দায় চাপান ছাপাখানার ওপরেই। তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা হচ্ছে আসলে প্রেসের (ছাপাখানা) মধ্যে ভুল করে ফেলছে। তারা নিজেরাও মাফ চাচ্ছে। আমার কিছু ছোট ভাইরা গিয়ে ব্যানারটা এনে লাগিয়ে দিয়েছে। ওরাই আবার টাঙিয়ে দিয়েছে। আমরা খুলে ফেলতাম জিনিসগুলা।’
‘লাগানোর পর কিন্তু আমার বাড়ি থেকেই ফোন করছে। ফোন করার পর বলতেছে ভুল হইছে ব্যানারে, নামিয়ে ফেল। এটার জন্য আমরা আসলে দুঃখিত।’
উল্লেখ্য, এক দশক পর প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষ্যে স্মরণকালের গণজমায়েত দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পলোগ্রাউন্ড মাঠে ওইদিন বক্তৃতা করবেন তিনি। প্রায় একমাস ধরেই এ সমাবেশকে ঘিরে চলছে প্রস্তুতি। দলীয়ভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি দলের সহযোগী সংগঠনগুলোও চালাচ্ছে প্রচারণা।
বাংলাধারা/আরএইচআর