সুমন বৈদ্য »
‘বাদশাহ’ এই নামটি যর্থাথভাবে শুধু একজনের সাথেই যায় তিনি হচ্ছেন শাহরুখ খান। ফ্লপ হিট মিলিয়ে একাধিক ছবি উপহার দিয়েছেন সিনেমা প্রেমীদের, তারই থেকে আজকের এই বাদশার সৃষ্টি। কিন্তু এই বাদশার সৃষ্টি করা কিছু সিনেমা বক্স অফিস ও দর্শক প্রেমীরা তার সৃষ্টির যর্থাথটা বুঝতে পারেনি, তবে যেগুলি আসলেই এক একটা মাস্টার পিস। তবে উল্লেখ্য বিষয় হলো এই যে, অভিনেতার এই ফ্লপ ছবিগুলি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হলেও সময়ের সাথে সাথে কাল্ট ক্ল্যাসিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যা তার বাদশাহ হওয়ার পথকে আরো মসৃণ করে দিয়েছিল। ক্যারিয়ারে তথাকথিত রোমান্স, অ্যাকশনের পাশাপাশি অনেক এক্সপেরিমেন্টাল ছবি করেছিলেন, যা তখনকার সময় থেকে এখনকার পর্যন্ত সব অভিনেতাদের জন্য অভিনয় শিখার একটা ব্যাপার ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তার অভিনীত সেরা সিনেমা নিয়ে থাকছে আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
২০০৪ সালে ভিন্নধর্মীমূলক গল্প নিয়ে সবার সামনে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ খান। তথাকথিত প্রেম, অ্যাকশন বাদ দিয়ে ভারতীয় দেশের সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে আশুতোষ গৌরিকার শাহরুখকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘স্বদেশ’ সিনেমাটি। যেখানে শাহরুখকে সবাই অন্যভাবে দেখতে পায়। এই সিনেমা বলিউড ইতিহাসের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড এক মাস্টারক্লাস মুভি যা তৎকালীন সমাজের হাজারো লোকের চোখ খুলে দিয়েছিল।
এই সিনেমার গল্প এগিয়েছে গ্ৰামীণ পরিবেশের নোংরা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। এই মুভিটায় মূলত গ্রামের অশিক্ষা, দারিদ্রতা, কুসংস্কার, গোড়ামী এসকল জিনিসের প্রতিই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই সিনেমায় শাহরুখ যা করে দেখিয়েছেন তা সকল নাগরিকের কর্তব্য।
স্বদেশ সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল শাহরুখের সেই অসাধারণ সংলাপ। যা এখনও সবার কাছে শিক্ষার আদর্শ হয়ে থাকবে।
‘আমি মানি না আমাদের দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে মহান দেশ। তবে হ্যা, আমি এটা বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে সেই শক্তি আছে, সেই সামর্থ্য আছে যা দ্বারা আমরা আমাদের দেশকে মহান বানাতে পারি’— পঞ্চায়েতের সভায় শাহরুখ খানের এই সংলাপটি শুধুই কি একটি সংলাপ নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু। শুধু মুখে বড় বললেই দেশকে বড় করা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও সামর্থ্যের উপযুক্ত প্রয়োগ।
এই সিনেমার আরও একটি প্রাণ ছিল এ আর রহমানের দেওয়া মিউজিক। বলাই বাহুল্য ওই মিউজিকগুলো সিনেমার মধ্যে কত বড় ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। সিনেমায় ব্যবহৃত মিউজিক, ব্যাকগ্ৰাউন্ড মিউজিক সবারই মন জয় করে রাখার ক্ষমতা রাখে। এই সিনেমার সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব ছিল গানের সময় সিনেমাটোগ্রাফি, যা গ্ৰামীণ দৃশ্য থেকে চোখ সড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।
গান নিয়ে যেহেতু প্রসঙ্গ তাই দুটো গান সম্পর্কে না বললেই নয়। এই সিনেমায় একটি চমৎকার গান আছে উদিত নারায়ণের গাওয়া যার নাম— ‘ইয়ে তারা ওয়ো তারা’ এই গানের মাধ্যমে শাহরুখ খান খুব সুন্দর করে একতার কথা বলে গেছেন। অপরদিকে স্বয়ং এ আর রহমানের গাওয়া ‘ইয়ে যো দেশ হে তেরা’ এই গানটা ছিল সবার মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। দেশের বাইরে থেকে যত সুখের রাস্তাই উন্মুক্ত করা হোক না কেন, দিনশেষে সেই মানুষটি তার দেশের কথাই ভাববে। আর সেজন্যই হয়তো শাহরুখ খান নাসার দায়িত্ব ছেড়ে চলে এসেছিলেন নিজ মাটির সুখ লাভের আশায়। চমৎকার এই গানটিতে এ আর রহমান সাহেব পুরো ছবিটিকে প্রতিফলিত করেছেন। আর শাহরুখ খান নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তিনি ছিলেন এক কথায় অসাধারণ ।
এই সিনেমার একটি জিনিস না জানালে নয়, এখানে বেশ কিছু নজরকাড়া দৃশ্যপট দেখানো হয়েছে যা সত্যি অবাক করার মত। এই মুভিটি হলো প্রথম ভারতীয় মুভি যার শুটিং করা হয়েছিল নাসা রিসার্চ সেন্টারের অভ্যন্তরে। এছাড়াও মুভিটির বেশিরভাগ দৃশ্য মহারাষ্ট্রের মিনাওয়ালিতে দৃশ্যায়ন করা হয়েছিল।
শাহরুখের এই সিনেমাটিকে ‘আই ওপেন’ সিনেমাও বলা হয়। কারণ তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার উপর নির্মিত সিনেমাটি অনেকের জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর এটি ছিল শাহরুখের সবচেয়ে সর্বোচ্চ আইএমডিবি রেটিং সিনেমা।
এখনো ছবিটি না দেখে থাকলে দেখে নিতে পারেন আর তাতে করে অবশ্য নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে হবে, কারণ অন্যরকম শাহরুখকে দেখার পাশাপাশি, একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন।