সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া বাজার মসজিদের পাশ ঘেঁষে যাওয়া পিএমখালী সড়ক দিয়ে পৌনে এক কিলোমিটার গেলেই বিস্তীর্ণ ভূমিতে চোখে পড়ে সরিষার হলুদ ফুলের মেলা। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ রঙের নয়নাভিরাম দৃশ্য। দেখলেই জুড়িয়ে যায় নয়ন। সেই হলুদের মাঝে মিশে যেতে চান সব বয়সী মানুষ। সরিষার ক্ষেতে দলবেঁধে ছুটছে শিক্ষার্থী, তরুণ, শিশু। স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিমায় হলুদাভ দৃশ্যের ছবি তুলছেন অনেকেই।
শুধু এখানে নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামে গ্রামে ক্ষেত এবং পতিত জমিতে এখন দেখা মিলছে সরিষার হলুদ ফুলের সারি। বাতাস দূর থেকে ভাসিয়ে নিয়ে আসছে সরিষা ফুলের ভালোলাগা সুগন্ধি। সেই গন্ধে মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। এরই মাঝে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মাঠজুড়ে সুস্থ সবল সরিষা ফুল চাষিদের মুখে ফুটিয়েছে স্বস্তির হাসি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কক্সবাজারের নয় উপজেলায় ৯শ ২৫ হেক্টর জমিতে এ বছর সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মাঝে চকরিয়ায় ৫০০ হেক্টর, পেকুয়া ১০০ হেক্টর, সদর ১০০ হেক্টর, রামুতে ১০০ হেক্টর এবং অন্যান্য উপজেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে ১২৫ হেক্টর জমি সরিষার চাষের আওতায় এসেছে। ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
তাদের মতে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে এবার কৃষি অফিস মৌসুমি চাষাবাদে উৎসাহী করছেন কৃষকদের। সেই সূত্রে সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনায় কৃষককে বিনামূলে সরিষা বীজ ও সার দিয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে পতিত জমিতে সরিষা চাষ করেছেন।
কৃষকরা জানান, আমন ধান কাটার পর কৃষি জমি অনেকটা অলস পড়ে থাকে। সেই ফাঁকা মাঠে সরিষা চাষ করে জমির উবর্রতা রক্ষার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ হয় চাষীদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার উৎপাদনের ভালোই হবে।
সদরের খরুলিয়া মাষ্টারপাড়া গ্রামের চাষি সরওয়ার আলম জানান, এবার তার পাঁচ বিঘা জমিতে করা সরিষার আবাদে এখন পর্যন্ত ক্ষেতে গুরুতর কোনো রোগবালাই নেই। এভাবে আর কিছু দিন গেলে, ভালো ফলন আশা করছেন তিনি।
তার মতে— সেচ, সার, ওষুধ, শ্রমিক খরচসহ প্রতি বিঘায় তার খরচ পড়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা লাভ হবার আশা রয়েছে।
ঝিলংজার খরুলিয়ার হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষাণী ঝর্ণা শর্মা বলেন, প্রতিবছর বাহির থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে সরিষা আবাদ করি। চলতি মৌসুমে তিনকাঠা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। বেশ ভালো ফুল এসেছে আশা করি ভালো ফলন হবে।
পিএমখালীর পাতলী গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, এ বছর আট বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছর ৩৮শ থেকে ৪ হাজার টাকা মণে সরিষা বিক্রি করেছিলাম। মোটামুটি লাভ হয়েছিল। আমাদের কৃষি অফিস থেকে সহায়তা হিসেবে অল্প পরিমাণে বীজ দেয়। বাকি বীজ কিনতে হয়। বর্তমানে সরিষাগাছে প্রচুর ফুল ধলছে। আশা করছি, এবার সরিষার ভালো ফলন হবে।
রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির শাহাদৎ হোসেন বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি পতিত পড়ে থাকতো। কিন্ত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না’— এই কথা শুনে তিন কাঠা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। বৈরী আবহাওয়া ও পোকামাকড়ের উপদ্রব না হলে সরিষা বিক্রি করে ভালো লাভ হবো, এ আশায় আছি।
সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সুপন বড়ুয়া বলেন, আমাদের ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০শতাংশ দেশে উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। সরিষা আবাদ বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। কৃষক যেন ভালো ফলন পায় সেলক্ষে কৃষি বিভাগের টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেন, জেলায় এ বছর ৯২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকের মাঝে ভালো মানের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার সরিষার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। সাধারণত ফাল্গুন মাসে কৃষকেরা ঘরে সরিষা তুলতে পারবেন।