বাংলাধারা প্রতিবেদক »
একসময় নবীন-প্রবীণ সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারনায় মুখর থাকতো চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন। কিন্তু শিল্পকলার সেই চিরচেনা চিত্র এখন যেন শুধুই স্মৃতি। নেই বিকেলের মিষ্টি আলোতে বন্ধু-বান্ধবদের দল বেঁধে গানের আড্ডা, নেই অডিটরিয়ামের দর্শকের ভীড় কিংবা মহড়া কক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার সেই চিত্র। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ পড়ে আছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রিয় এ অঙ্গন। এই কঠিন সময়ে কীভাবে চলছে শিল্পকলার সকল কার্যক্রম, সংশ্লিষ্টরা কীভাবে পার করছেন তাদের দিনগুলো; সম্প্রতি এসব বিষয়ে বাংলাধারার সাথে আলাপ হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবুর সাথে—
বাংলাধারা: করোনাকালীন সময়ে কেমন চলছে শিল্পকলার একাডেমির কার্যক্রম?
সাইফুল আলম বাবু: করোনা পরিস্থিতিতে কিছুদিন শিল্পকলার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। যখন দেখেছি এসময় আরও বাড়ছে, তখন আমরা অনলাইনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করি। কারণ এভাবে তো আর চলা যায় না। শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখার মূলস্রোতধারা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রতিটি বিভাগেই শিক্ষকরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
বাংলাধারা: অনলাইনে প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা কার্যকরী?
সাইফুল আলম বাবু: আসলে সব শিক্ষার্থীর মেধা ও কেপাসিটি ক্ষমতা সমান নয়। কিন্তু বৈশ্বিক এ পরিস্থিতিতে তো এর চাইতে ভালো কোনো উপায় নেই। একেবারে বন্ধের চেয়ে কিছু হলেও ভালো হচ্ছে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে অন্তত শিক্ষার্থীদের চর্চা হচ্ছে। তাই একেবারে ভালো বলা যাবে না আবার খারাপও বলা ঠিক হবে না।
বাংলাধারা: শিল্পকলা একাডেমিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট কতজন যুক্ত রয়েছেন?
সাইফুল আলম বাবু: শিল্পকলায় ২২ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
বাংলাধারা: করোনার মধ্যে কি তাদের বেতন-ভাতা দিচ্ছেন? দিলে সেটা কীভাবে?
সাইফুল আলম বাবু: করোনা পরিস্থিতিতেও আমরা কোনো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন বন্ধ রাখিনি। আমরা মাসের টাকা মাসে ও ঈদে বেতন বোনাসসহ সবই দিয়েছি। এমনিতে শিল্পকলায় বছরে একবার শিক্ষার্থীদের থেকে নির্ধারিত ফি নেয়া হয়। এবছরও করোনার মধ্যে আমরা অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। তখন শিক্ষার্থীদের থেকে এককালীন বেতন নেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের আট শিক্ষকের বেতন ও ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন ঢাকা থেকে আসে। বাকি ১২ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মকর্তার বেতন আমরা আমাদের স্থানীয় ফান্ড থেকে দিয়ে থাকি। তাই এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো সমস্যা হয় নি।
বাংলাধারা: করোনা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তখন কীভাবে সামলাবেন?
সাইফুল আলম বাবু: করোনা পরিস্থিতিতে আগে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কারণ আগে বাঁচতে হবে। তাই এখন যেভাবে অনলাইনে ক্লাস চলছে বন্ধ বাড়লে এভাবেই চলবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাধারা: আমরা জানি শিল্পকলার বড় একটা আয় আসে শিল্পকলার অডিটরিয়াম ভাড়া থেকে। যেহেতু এখন কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না তাহলে ভবিষতে খন্ডকালিন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কীভাবে দিবেন? কোন পরিকল্পনা?
সাইফুল আলম বাবু: আমরা এখনো পর্যন্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়িনি। আগামী আরও এক বছর কোনো সমস্য হবে না। কারণ শিল্পকলার নিজস্ব ফান্ডে এখনো পর্যাপ্ত টাকা জমা আছে।
বাংলাধারা: আমরা জানতে পেরেছি আজ আপনার জন্মদিন। জন্মদিনে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বাংলাধারার পক্ষ থেকে রইল জন্মদিনের অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
সাইফুল আলম বাবু: বাংলাধারাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাংলাধারা/এফএস/এআর